নবজাতকও ছোট শিশুর খাবার
সমৃদ্ধভবিষ্যতের জন্য মানসম্মত খাবার খাওয়ানো
বাড়ন্তশিশুদের বয়স উপযোগী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অনেকবাবা-মা তাদের সন্তানদেরমায়ের দুধের পাশাপাশি কখন ও কীভাবে সম্পূরকখাবার দিতে হয় সে বিষয়েসঠিক তথ্য পান না। অথচ শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সময় পুষ্টিহীনতা এড়াতে এটা খুবই জরুরি বিষয়।
পুষ্টিকরউপাদান নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিশুকে ছয় মাস বয়সপর্যন্ত অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণহলে তাকে সিরিয়াল এবং শাকসবজি ও ডিমের মতোপারিবারিক খাবার চটকে খাওয়াতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে অন্যান্য পারিবারিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাইয়ে যেতে হবে।
একেইবলে পরিপূরক খাবার খাওয়ানো। এর মধ্য দিয়েশিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়া থেকে পারিবারিক খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়। শিশুর ক্রমবর্ধমান পুষ্টি চাহিদা পূরণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে ছয়মাস থেকে ২৪ মাস বয়সপর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং এমনএকটি সময়ে এটা হয় যখন তারশারীরিক ও মানসিক বিকাশঘটে।
এইপর্যায়ে পুষ্টির ঘাটতি ও অসুস্থতা বিশ্বজুড়েপাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদেরউচ্চ হারে পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী।
তবেসময়মতো পরিপূরক খাবার দেওয়া শুরু করা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়বার করে খাওয়ানো এবং খাবার তালিকায় কী কী ভিন্নতাআনা উচিত সে বিষয়ে বাবা-মার জ্ঞান খুব সীমিত।
পরিবারেখাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুরো জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ শিশুকেতার প্রয়োজনমতো খাবার দেয়া যায়না। সীমিত আয়ের পরিবারগুলো মাছ- মাংসের মতো প্রাণিজ আমিষ সব সময় কিনতেপারে না।
শিশুকেবয়স উপযোগী পরিপূরক খাবার দেওয়ার হার জাতীয়ভাবেই বেশ কম এবং কিছুকিছু এলাকা যেমন শহরের বস্তি এলাকায় এই হার আশঙ্কাজনকভাবেকম।
গবেষণায়দেখা গেছে যে, বাংলাদেশি মায়েরা প্রায়ই সন্তানের জন্য ফর্মুলা খাবার পছন্দ করেন এবং স্বামীকে মাছ-মাংস কেনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন।
কোনোকোনো কমিউনিটিতে শিশুকে মাছ ও মাংস খাওয়ানোরক্ষেত্রে কুসংস্কার রয়েছে। কখনও কখনও বাড়িতে এসব খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও ছোট শিশুদের তা দেওয়া হয়না।
জন্মেরএক ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ, যেটা ‘শাল দুধ’ নামে পরিচিত তা খাওয়াতে হবে।এই দুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো নবজাতককে সাধারণ কিছু অসুখ যেমন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকেসুরক্ষা দেয়।
কিন্তুপ্রাথমিক এই ব্যবস্থা নেওয়াএবং দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো পরিবারের সংখ্যা এখনও অনেক কম। ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারেও এক্ষেত্রে অসমতা রয়েছে। সিলেট বিভাগে শিশুকে ‘শাল দুধ’ খাওয়ানোর হার ৭৩ দশমিক ৫শতাংশ হলেও খুলনায় তা ৪৭ দশমিক৩ শতাংশ।
দরিদ্রএবং ধনী পরিবারের মায়েদের মধ্যেও সন্তানকে শাল দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। দরিদ্র মায়েদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৮দশমিক ১ শতাংশ হলেওধনী পরিবারের মায়েদের ক্ষেত্রে তা ৬২ দশমিক৫ শতাংশ।
বাংলাদেশশিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও এটা আবার উদ্বেগজনকভাবে কমে আসছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৯০ শতাংশ থেকেকমে ৮৭ শতাংশ হয়েছে।
শালদুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো নবজাতককে সাধারণ কিছু অসুখ যেমন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকেসুরক্ষার জন্য জরুরি।
সমাধান
ছোটশিশুর খাবারের মানদণ্ড তৈরিতে সরকারকে সাহায্য করছে ইউনিসেফ
কাউন্সেলিংএবং মানুষের প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য-সেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ইউনিসেফ।
এসবস্বাস্থ্য কর্মীরা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করেন এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার পদ্ধতিগুলো মা, সেবাদাতা ও পরিবারের সদস্যদেরসামনে তুলে ধরেন।
বয়সেরভিত্তিতে শিশুর খাবারের পরিমাণ, কয়বার করে খাওয়াতে হবে এবং সম্পূরক খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার বিষয়ে আদর্শ মান ঠিক করতে ইউনিসেফ সরকারকে সহায়তা করছে।
বুকেরদুধ খাওয়ানো ও তা সংরক্ষণ, স্তনের কোনো সমস্যা হলে তার সমাধানের পদ্ধতি মেয়েদের সামনে তুলে ধরার মতো সক্ষমতা অর্জনে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয় ইউনিসেফ।
পরিবারেরবর্তমান কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করার দক্ষতা তৈরিতেও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তথ্য ব্যবহার করে সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের লক্ষ্যে কর্মসূচি ঠিক করারও সক্ষমতা অর্জন করেন তারা।
সন্তানজন্মের আগে পুষ্টি বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণকারী মায়েদের হার বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছে ইউনিসেফ।
পুষ্টিবিষয়ে পরামর্শ গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ওপরও নজর দিচ্ছে ইউনিসেফ। পাশাপাশি ৬ মাস থেকে ৫বছর বয়সী শিশুদের ‘ভিটামিন এ’ খাওয়ানোর হারযাতে আরও বাড়ে সে বিষয়েও গুরুত্বদেওয়া হচ্ছে।
শহরঅঞ্চলের নারী ও শিশুদের চাহিদাপূরণের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কর্মক্ষেত্রে তাদের অধিকার রক্ষার ওপর জোর দেয় ইউনিসেফ।
‘মাদারসঅ্যাট ওয়ার্ক’ উদ্যোগের আওতায় ইউনিসেফ কারখানায় কর্মীদের জন্য পরিবারবান্ধব নীতি গ্রহণে মালিকদের উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম সাতটি স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করা হয়েছে: দুধ খাওয়ানোর জন্য নির্ধারিত স্থান, দুধ খাওয়ানোর জন্য বিরতি, চাইল্ড কেয়ারের ব্যবস্থা, বাবা-মা হতে যাচ্ছেএমন কর্মীদের জন্য ছুটি, নগদ ও চিকিৎসা সুবিধা, চাকরির সুরক্ষা এবং নিরাপদ কাজের ব্যবস্থা।
বুকেরদুধ খাওয়ানো ও তা সংরক্ষণ, স্তনের কোনো সমস্যা হলে তার সমাধানের পদ্ধতি মেয়েদের সামনে তুলে ধরার মতো সক্ষমতা অর্জনে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয় ইউনিসেফ।
0 Comments